ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ , ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |

সম্পাদকীয়

বিভ্রান্তির চোরাবালিতে সত্য হারিয়ে যায়,লন্ডন থেকে লেখক,সমাজকর্মী ও কলামিস্ট নাজিম রুবেল

নিজেস্ব প্রতিবেদক
আপলোড সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ১০:০৯:৫৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-০৭-২০২৫ ১০:০৯:৫৯ অপরাহ্ন
বিভ্রান্তির চোরাবালিতে সত্য হারিয়ে যায়,লন্ডন থেকে লেখক,সমাজকর্মী ও কলামিস্ট  নাজিম  রুবেল
লন্ডন থেকে লেখক,সমাজকর্মী ও কলামিস্ট নাজিম রুবেলঃ মিটফোর্ডে সদ্য ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে সারাদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট প্রপাগাণ্ডা ঘুরে বেড়িয়েছে—যেন ব্যবসায়ী সোহাগকে যুবদলের কিছু নেতা চাঁদা না পেয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এর চেয়েও অনেক বেশি জটিল, গভীর এবং রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। প্রথমত, নিহত সোহাগ নিজেও একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। যেই দোকানে বসতেন, সেটির মূল মালিক ছিলেন যুবদলের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মনির, যিনি ২০০৪ সালে খুন হন। মনির হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে সোহাগও ছিলেন। সেই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই সোহাগ ওই দোকানের দখল নেয় এবং ধীরে ধীরে পুরান ঢাকার সরকারি তামার তার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা জানান, সোহাগ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং পরে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার পুরনো রাজনৈতিক পরিচয়—যুবদলের বন্ধুরাও আবার তার সাথে যুক্ত হতে থাকে। মূলত এই সিন্ডিকেটভিত্তিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েই দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে, যার জেরে ঘটেছে এই নির্মম হত্যাকাণ্ড। অর্থাৎ, এটি চাঁদাবাজির ঘটনা নয়—এটি যুবদলের মধ্যকার দুই গ্রুপের দীর্ঘদিনের পুরোনো ব্যবসায়িক বিরোধের ফল, যার শিকড় ২০০৪ সালের মনির হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়ায়। প্রতিপক্ষ রাজনীতি ও মিডিয়ার কিছু অংশ অত্যন্ত কৌশলে এই ঘটনাকে চাঁদাবাজির খোলসে সাজিয়ে একটি “বিএনপি বনাম ব্যবসায়ী” ধাঁচে প্রচার করেছে। উদ্দেশ্য একটাই—যুবদল তথা বিএনপিকে দুর্বৃত্ত ও সহিংস রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে তুলে ধরা। অথচ সত্য হলো, এই সহিংসতায় লিপ্ত উভয় পক্ষই একই রাজনৈতিক ছাতার নিচে বহুদিন ধরে সক্রিয়, কেউ “আওয়ামীঘেঁষা হাইব্রিড”, কেউ পুরনো যুবদল। পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট এই হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মানবিকতা, রাজনীতি বা আইনসম্মততা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। যারা এই ঘটনায় জড়িত, তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। শুধু দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন নয়, তারা নৈতিক ও মানবিক সব সীমা অতিক্রম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—তবে দলীয় বিবেচনায় নয়, আইন ও ন্যায়ের ভিত্তিতে। বিএনপির জন্য এটি সতর্কবার্তা ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি অংশ অর্থের নেশায় অন্ধ হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বহু ‘হাইব্রিড’ নেতা ঢুকে পড়েছে, যারা দলে ঢুকে গণআন্দোলনের ভাবমূর্তিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসায়িক লেনদেনের দ্বন্দ্ব—এসবের ফলেই ইতোমধ্যে একাধিক প্রাণ ঝরে গেছে। বিএনপি যদিও দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে, তবু মাঠপর্যায়ে এসব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এই গোষ্ঠী শুধু গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় কালিমা লেপন করছে না, বরং দলের সামগ্রিক ভাবমূর্তিকেই জনগণের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবলে বিপদ বিএনপি যদি মনে করে প্রতিপক্ষ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, তাহলে সেটা হবে ভয়ানক ভুল। হ্যাঁ, সংগঠনের দিক থেকে আওয়ামী লীগ হয়তো আর আগের মতো শক্তিশালী নয়, কিন্তু তারা অত্যন্ত চৌকস, সংগঠিত এবং ডিজিটাল প্রোপাগাণ্ডা চালনায় দক্ষ। বিএনপির এই ভেতরের দুর্বলতাগুলোই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। একটি অদৃশ্য, হিসেবি প্রতিপক্ষ কিভাবে বিএনপির দুর্বল জায়গায় আঘাত করছে—সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে চালানো প্রপাগাণ্ডাই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও দায় আছে এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপরও দায় বর্তায়। কেন এমন প্রকাশ্য সংঘর্ষ হয়, কেন রাজপথে প্রকাশ্যে খুন হয়, কেন একটি সিন্ডিকেট বছরের পর বছর সরকারি সম্পদ দখল করে রাখে—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে রাষ্ট্রকেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে, জনআস্থা যেমন কমবে, তেমনি সহিংসতা বাড়বে। ⸻ আজ দরকার আত্মসমালোচনা, দলীয় শুদ্ধি অভিযান এবং প্ররোচনার বিরুদ্ধে বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক কৌশল। বিএনপিকে বুঝতে হবে—ক্ষমতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা কখনও প্রতিপক্ষ নয়, বরং নিজেদের মধ্যকার অনিয়ন্ত্রিত, অনৈতিক অংশ। রাজনীতি যদি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে শত্রু দরকার হয় না, ধ্বংস আসে নিজেদের ভেতর থেকেই।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SM Sohel

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ